স্বয়ং যমরাজের মৃত্যু হয়েছিল কার হাতে এবং যমরাজ কাদের পাপপুন্যের বিচার করতে পারে না।

এই ত্রিভুবনে কার কখন মৃত্যু হবে তা লেখা থাকে চিত্রগুপ্তের খাতায়। যখন যার মৃত্যুর সময় হয়,তখন যমরাজ তার দূতদের পাঠিয়ে তাকে নিয়ে আসে যমলায়ে। তারপর তাঁর পাপপুন্যের বিচার করে। যমরাজের দায়িত্ব হলো পাপপুন্যের বিচার করা। পূর্বকালে মহামুনি গৌতমের একজন পরম শিবভতক্ত বন্ধু ছিল তার নাম শ্বেত। শ্বেত শিবমন্ত্র ছাড়া আর কিছুই বুঝেনি সারাজীবন ধরে শিবের পূজা করে। এখন বৃদ্ধ, মৃত্যুর সময় হয়েছে যমরাজ তার দূতদের পাঠায় তাকে নিয়ে আসার জন্য। অনেকক্ষন হয়ে গেছে তথাপি দূতরা আসছে না, দেখে যমরাজ আবার মৃত্যুকে পাঠায় তাকে বেঁধে নিয়ে আসার জন্য। তৎক্ষনাৎ মৃত্যু স্বেতের বাড়ীতে আসে, দেখে যমদূতরা স্বেতের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যু রেগে গিয়ে বলে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? দূতরা বলে বাড়ীর ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখো, স্বয়ং মহেশ্বরের দূতরা শ্বেতকে আগলে বসে আছে। ওখানে যাওয়া তো দূরের কথা – ওদিকে তাকাতেই পাচ্ছি না। মৃত্যু – দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে, শিবের অনুচররা দণ্ড হাতে শ্বেতকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যু মনে মনে বলে যমরাজ হল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, আমি তার অনুচর, আমার ভয় কী। শিবের অনুচর আছে তো তাতে আমার কি। তার পর সে ভিতয়ে গিয়ে শ্বেতের পাশে দাঁড়ালো। তখন শ্বেত শিবমন্ত্র জপ করছে পাশে যে এত অনুচর সেদিকে তাঁর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ এক শিবদূত বলে মৃত্যু তুমি এখানে কেন এসেছো। মৃত্যু বলে আমার কাজ কি তোমরা সবাই জানো আর শ্বেতের আয়ু ফুরিয়ে গেছে তাই প্রভুর আদেশে ওকে নিয়ে যেতে এসেছি এই বলে শ্বেতকে বাঁধার জন্য এগিয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে শিবের অনুচরা দণ্ড হাতে নিয়ে গর্জন করে উঠলো বলে ওরে মৃত্যু শিবভক্তের উপরে তোর যমের কোন অধিকার নেই।তূই এসেছিস একে নিয়ে যেতে এত সাহস তোর,বলতে বলতে মৃত্যৃর মাথায় আঘাত করলো। সঙ্গে সঙ্গে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর মৃত্যু হল। এই সব দেখে যমদূতরা প্রানপনে ছুটে গিয়ে যমরাজকে সমস্ত কথা জানালো। সমস্ত কথা শুনে যমরাজ রেগে গিয়ে বলে আমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে শিবের অনুচররা এত সাহস। তার পর যমরাজ,চিত্র গুপ্ত সহ মহিস, বেতাল ভুত ও অভিব্যপ্তি সবাইকে নিয়ে শ্বেতের বাড়ীতে উপস্তিত হল। এদিকে শিবভক্ত শ্বেতের বাড়ীতে কার্তিক, গনেশ আর নন্দি এসে বসে আছে। পরস্পর পরস্পরের দেখে একে অপরের প্রতি গর্জন করতে করতে শুরু হলো প্রচণ্ড লড়াই। দেবসেনাপতি কার্তিকের অস্ত্রে মৃত্যুলোকের অধিপতি যমরাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা গেল। বহু একগুঁয়ে যমদূত মারা গেল কেউ কেউ বেঁচে ছিল। তাঁরা তৎক্ষনাৎ যমরাজের পিতা সূর্যদেবের কাছে গিয়ে সমস্ত কথা বলে। সূর্যদেব সৃষ্টি কর্তা ব্রক্ষা এবং সমস্ত দেবতাদের এই দুঃসংবাদের কথা জানা। সমাধানের জন্য সমস্ত দেবতারা পরামর্শ করে ঠিক করলো যে শিবকে প্রসন্ন করতে হবে। দেবাদিদেব মহেশ্বর প্রসন্ন হলে, তিনি যমরাজকে বাঁচিয়ে দেবে।তাই শিবকে প্রসন্দ করার জন্য দেবতারা কৈলাসে গিয়ে ভগবান শিবের পূজা স্বত স্তুতি শুরু করলো। দেবতাদের স্তব স্তুতি শুনে মহেশ্বর জানতে চায় কি কারণে তারা তার স্বরন করছে। দেবতারা হাত জোড় করে বলে আপনার পুত্র কার্তিক মৃত্যুর অধিপতি যমরাজকে নিহত করেছে। আপনি যমরাজকে বাঁচিয়ে দিন। যমরাজ না থাকিলে ন্যায় অন্যায়ে বিচার কে করবে কেমন করে হবে। দেবাদিদেব মহাদেব বলে যম আমার পরম ভক্ত শ্বেতকে যমালয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, তাই আমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। সেই জন্য আমার পুত্র পিতার ময্যাদা রাখতে এ কাজ করেছে। ওকে আমি কি ভাবে বাঁচাবো, আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তখন আবার করুন ভাবে মিনতি করে বলে – হে প্রভু আপনি জগতে পূজনীয়। আপনার আদে মতো, যার যেমন দায়িত্ব দিয়েছেন আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছি। যমরাজকে ত্রিভুবনের পাপপুন্যের বিচারের দায়িত্ব পালনের ভার দিয়েছেন। যমরাজ তাঁর দায়িত্ব যথার্থ পালন করছে। তাতে তার কি অপরাধ হলো। হে মহেশ্বর আপনি পরম তপস্বী ও জ্ঞানী। আপনাকে বলার মতো আমাদের কিছু নেই। তবু একবার চিন্তা করুন, আপনার বাক্য স্বীকার করে নিয়ে পৃথিবীর নিয়ম রক্ষা করুন। তখন ভগবান শিব বলে তোমরা আমার ভক্ত। তাই তোমাদের আবেদন রক্ষা করা আমার কর্তব্য। শোন তবে একটি শর্তে যমকে বাঁচাতে পারি। শর্তটি হলো – আমার ভক্তদের উপর যমের কোনো অধিকার থাকবে না। যমালয়ে নিয়ে যেতে পারবে না – এবৎ সেখানে তার কোনো বিচার হবে না। আমার ভক্ত আমার কাছে আসবে। এই শর্ত তোমরা মেনে নিলে যমকে আমি বাঁচিয়ে দিতে পারি। আরো শোনো যারা আমার ভক্ত, তারা যমের পাঠানো কোনো ব্যাধিতে ও ভুগবে না।তারা পাপ পূন্যের উপরে। তাদের কোনো পাপ পূন্যের বিচার হবে না। দেবতারা বলে হে মহেশ্বর আপনার শর্ত আমরা মেনে নিলাম। তৎক্ষনাৎ ভগবান শিবের আজ্ঞায় নন্দী গোদাবরীর জল যমরাজ ও যমদূতদের উপর ছিটিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে প্রান ফিরে পেলো যমরাজ এবং তার অনুচররা। তার পর ভগবান শিবকে প্রনাম জানিয়ে ফিরে গেল তারা আপন লোকে।শ্বেত গেলো শিবলোকে এবং দেবতারা ফিরে গেলো স্বর্গলোকে।জয় জয় শিব শঙ্কর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top