কুম্ভকর্ণের কোন পুত্র রাম রাবনের যুদ্ধে বেঁচে গিয়ে দ্বিতীয় বার লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিল।

কুম্ভকর্ণের কোন পুত্র রাম রাবনের যুদ্ধে বেঁচে গিয়ে দ্বিতীয় বার লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিল।
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জঙ্গলে এক রক্ষসী বাস করত তার নাম ককটী।লঙ্কার রাজা রাবনের ভাই কুম্ভকর্ণ কোন কারনে এই পাহাড়ের জঙ্গলে আসে।তখন সে এই রাক্ষসীকে দেখতে পায়, তাঁকে ভালো লাগে। তাই তাঁকে বিয়ে করে এখানে থেকে গেল। তাদের একটি পুত্রসন্তান ও হয় তাঁর নাম দেয় ভীম। ভীম ছোট সেই সময় রাম রাবনের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। আর সেই মুহুর্তে কুম্ভকর্ণের যুদ্ধক্ষেত্রে ডাক পরে। কুম্ভকর্ণ তাদের রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে আসে সেই যূদ্ধে মারা যায়। এদিকে ভীম দিনে দিনে বড় হয় শক্তি ও প্রচন্ড হয়। একদিন ভীম তাঁর মায়ের কাছে তার বাবার পরিচয় জানতে চায়। ভীমকে বলে তোর বাবার নাম কুম্ভকর্ণ তিনি ছিলেন একজন মহাবীর লঙ্কার রাজা রাবনের ভাই। এরপর সমস্ত ঘটনা তাঁকে বলে। মায়ের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে ভীম খুব রেগে যায়। সে প্রতিজ্ঞা করে রামচন্দ্রের চেয়ে বড় বীর হয়ে সে ত্রিভুবনের রাজা হবে। তার পর ভীম তাঁর মায়ের কাছে আশির্বাদ নিয়ে প্রায় হাজার হাজার বছর ধরে কঠোর তপস্যা করে। সৃষ্টিকর্তা ব্রম্ভা ভীমের কঠোর তপস্যার সন্তষ্ট হয়ে ব্রম্ভলোক থাকে নেমে আসে তার কাছে। বললেন ভীম আমি তোমার তপস্যার সন্তষ্ট হয়েছি। তুমি কি চাও বলো। ভীম বলে প্রভু ত্রিভুবনের কেউ যেন আমাকে পরাজিত করতে না পারে। আমি মহাবলশালী হতে চাই। ব্রম্ভাদেব বলে তথাস্ত। তাই হোক। এরপর ব্রম্ভাদেব ব্রম্ভলোকে চলে গেল। ভীম ও তার মায়ের কাছে ফিরে এসে বলল মা আমি ব্রম্ভাদেবের বর পেয়ে মহাবলশালী বীর হয়েছি। ত্রিভুবনের কেউ আমাকে হারাতে পারবে না।মা আমি ত্রিভুবনের রাজা হতে চাই। তার মা তাকে আশির্বাদ করে বলে তুই ত্রিভুবনের রাজা হবি। এরপর রনসাজে সৈন্য নিয়ে গিয়ে সর্বপ্রথম কামরূপ দখল করে নেয়। কামরূপের রাজা বিশুদ্ধ -রানী দক্ষিনাকে নিয়ে পঞ্চকোশী নদীর তীরে এসে একটি নির্জন জায়গায় থাকে। রাজা বিশুদ্ধ শিব ভক্ত ছিলেন। তাই তিনি এখানে শিবলিঙ্গ গড়ে পূজা উদযাপন করে পূজা করতো। এদিকে ভীম পৃথিবীর একেরপর এক দেশ জয় করতে লাগলো। ভীম নির্দেশ দিলো কেউ কোথাও কোন দেব দেবীর পূজা ও যাগযজ্ঞ করতে পারবে না। যদি কেউ করে তা হলে তার কপালে অশেষ দুঃখ আছে। ভীমের ভয়ে পূজা পাঠ যাগযজ্ঞ বন্ধ হয়ে গেল। দেবতা এবং মুনি ঋষিদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে পরলো। দেবতারা ভগবান শিবের কাছে গিয়ে তাঁদের এই অসহায় কথা বলেন। দেবাদিদেব মহাদেব বলে আমি সব বুঝতে পারেছি। ভীম মহাবলশালী বীর হয়ে ধর্মকে প্রায় লোপ করে দিতে বসেছে।এমন কি আমার ভক্ত রাজা বিশুদ্ধের উপর অত্যাচার করেছে। তোমরা এখন যাও। আমি দেখছি কি করা যায়। ভীমের অনুচররা সমস্ত দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে দেখে কে কি করছে সমস্ত খবর ভীমকে দেয়। একদিন অনুচররা এসে ভীমকে বলে বিশুদ্ধ আর তার বউ দক্ষিনা পঞ্চকোশী নদীর তীরে বসে শিবলিঙ্গ পূজা করছে। একথা শুনে ভীম প্রচণ্ড রেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সৈন্য নিয়ে গর্জন করতে করতে পঞ্চকোশী নদীর তীরে এসে রাজা রানীকে বলে এই দেশে পূজা পাঠ নিষিদ্ধ তোমরা কি জানো না। জেনে ও আমার আদেশ অমান্য করে তোমরা পূজা পাঠ করছো।রাজা বিশুদ্ধ বলে -আমরা শিবের আদেশে তার পূজা করছি। তিনি যা আমাদের করাচ্ছেন – তাই আমরা করছি। এসব তাঁর ইচ্ছা। আপনি এখন রাজা তাই আমাদের রাখতে পারেন আর মারতে ও পারেন। ভীম গর্জন করে বলে শিব ঐ ভস্ম মাখা ভাঙ খাওয়া ভোম্বল, এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় শশানে পড়ে থাকে। তাঁকে পূজা করে কোন লাভ নেই। পূজা বন্ধ কর – বলেই ভীম তলোয়ার বের করে তাদের মুণ্ড কাটতে এগিয়ে এলো সঙ্গে সঙ্গে ত্রিশুল ধারী শিব আবির্ভাব হয়ে ত্রিশুল দিয়ে ভীমের তলোয়ারকে ভেঙে খাঁন খাঁন করে দিল। ভীমের চীৎকার আর শিবের হুংকারে আকাশ বাতাস আলোড়িত করতে লাগলো। দেবসেনা আর রাক্ষস সেনাদের মধ্যে লাগলো প্রবল সংগ্ৰাম। ভগবান শিবের তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন বেরোতে লাগলো। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল মহাবলশালী বীর ভীম ও সেনাবাহিনীর দল। এটা ছিলো দ্বিতীয় লঙ্কাকাণ্ড।এরপর ভগবান শিবের নিদের্শে রাজা বিশুদ্ধ আর রানি দক্ষিনা নিজ রাজ্যে ফিরে এসে দিকে দিকে ভগবান শিবের মাহাত্ম্য প্রচার করতে থাকে। জয় জয় শিবশম্ভুর জয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top