দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন- ঐশ্বর্যের দেবী যিনি সুখ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ধন – ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার করা হয় বলে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো বলে।
কেন কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো রাত্রে হয় -: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার আছে। লক্ষ্মী পূজোর দিন ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় চারিদিকে আলপনা দেওয়া হয়। এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে লক্ষ্মী দেবীর পূজা করা হয়। কোজাগরী শব্দটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ হলো কে জেগে আছো, বিশ্বাস করা হয় যে এই পূজার রাত্রে লক্ষ্মী দেবী স্বর্গ থেকে মর্তো অবতীর্ণ হন, এবং যাদের ঘরের দরজা খোলা আছে আর যারা জেগে থাকে লক্ষ্মী দেবী তাদের ঘরে প্রবেশ করেন এবং ধন- সম্পদ প্রদান করেন। যেহেতু লক্ষ্মী দেবী কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে স্বর্গ রাজ্য থেকে নেমে আসেন আর কোজাগরী পূর্ণিমাতে লক্ষ্মী পূজো হয় সেই জন্য কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো রাত্রে হয়।
মানুষজন সাধারণত রাত্রে ঘুমোয় এবং দিনের বেলায় কাজ কর্ম করেন। রাত্রে না ঘুমোনকে বলা হয় জাগা বা জাগরণ।প্রবাদ বা বিশ্বাস আছে যে জেগে থাকে তাঁর গৃহে লক্ষ্মী দেবী আসেন। রাত্রে লক্ষ্মী পূজো হলে রাত্রিতে জাগা হবে এবং এক সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা ও করা হবে তাই রাত্রে লক্ষ্মী পূজো হয়।
কেন দূর্গা পূজার পর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো হয়। -: কোজাগরী পূর্ণিমা দূর্গা পূজার পর আসে আর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো কোজাগরী পূর্ণিমার দিন পালিত হয় তাই দূর্গা পূজার পর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো হয়।
আরো একটা পৌরাণিক কাহিনী আছে মহাভারতের শান্তি পর্বে উল্লেখ আছে একবার দেবতাদের অহংকার ও আলস্যের কারণে লক্ষ্মী দেবী স্বর্গ রাজ্য ত্যাগ করে পাতালে চলে যান ।এর কারণে স্বর্গ রাজ্য লক্ষ্মী হারা হয়। দেবতারা চিন্তিত হয়ে ভগবান বিষ্ণুর স্মরণাপন্ন হয়। বিষ্ণুদেবের পরামর্শে দেবতারা ও অসুররা একত্রিত হয়ে সমুদ্রমন্থন করেন এবং সুমদ্র থেকে মহালক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো কি কি দ্রব্য লাগবে। -: সিদ্ধি অধিবাসডালা, তিল, হরিতকী, ঘট, একসরা আতপচাউল, ঘটাচ্ছাদনগামছা ১, কুণ্ডহাঁড়ি ১, তেকাঠা ১, দর্পণ ১. পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, সশীষ ভাব ১, তীর ৪. পুষ্প, দূর্বা প্রভৃতি, আসনাঙ্গুরীয়ক ৩, মধুপর্কের বাটী ৩, দধি, মধু, গব্যঘৃত, চিনি, নৈবেদ্য ৩. কুচা নৈবেদ্য ১, লক্ষ্মীর শারী ১, নারায়ণের ধুতি ১. পেচক পুজার ধুতি ১, লোহা, শব্ঙ্খ, নখ, সিন্দুর চুবড়ি, বালি, কাষ্ঠ, খোড়কে, মৃত এক পোয়া, হোমের বিশ্বপত্র ২৮. ভোগের দ্রব্যাদি, কপূর, চিপিটক (চিড়া), নারিকেল, পান, পানের মশলা, থালা ১. ঘটি ২, রচনা, ফুলমালা ১, চন্দ্রমালা ১, পূর্ণপাত্র ১. দক্ষিণা।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো মন্ত্র -:
দেবী লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র -: ওঁ পাশাক্ষমালিকান্তোজ-শৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্। গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্। রৌক্সপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু॥
দেবী লক্ষ্মীর বীজ মন্ত্র – : ওঁ শ্রীং শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ ।
দেবী লক্ষ্মীর গায়ত্রী মন্ত্র -: ওঁ শ্রী মহালক্ষ্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রিয়ৈ ধীমহি। তন্নঃ শ্রীঃ প্রচোদয়াৎ।
দেবী লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র -: ওঁ নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিত্ত্বৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্মদর্চনৎ৷৷ এষ সচন্দনগন্ধপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীং শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
দেবী লক্ষ্মীর প্রনাম মন্ত্র -: ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্ব্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মি নমোহস্তুতে ।
নারায়ণের গায়ত্রী মন্ত্র -: ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি তন্নো বিষুঃ প্রচোদয়াৎ।
নারায়ণের প্রনাম মন্ত্র -: ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।
কুবেরর প্রনাম মন্ত্র -: ওঁ ধনদায় নমস্তুভ্যং নিধিপদ্মাধিপায় চ ভবস্তু তৎ প্রসাদান্মে ধনধান্যাদি সম্পদঃ।