দেবী লক্ষ্মীর -: দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন- সম্পদ সমৃদ্ধির ও সৌভাগ্যের দেবী। যিনি প্রতি ঘরে ঘরে এবং ব্যবস্থা বানিজ্য প্রতিষ্ঠানে নিত্য পূজিত হন। বৈকুণ্ঠ প্রতি শ্রী বিষ্ণুর স্ত্রী। তিনি কিছু বিশেষ তিথিতে বিশেষ নামে পূজিত হন।
দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা এবং অলক্ষ্মী পূজাবিধি -:
দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা কি -: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর পর কার্তিক মাসে অমাবস্যার প্রদোষে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা করা হয়। কার্তিক মাসে অমাবস্যার দিন সন্ধ্যাকালে বিভিন্ন স্থানে এবং দেব গৃহে দ্বীপমালা দিবার বিধি আছে বলে ইহাকে দীপান্বিতা অমাবস্যা বলে আর এই শুভক্ষণে লক্ষ্মী পূজো করা হয় বলে এই লক্ষ্মী পূজাকে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা বলে।
দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজোর ধ্যান মন্ত্র -: ওঁ পাশাক্ষমালিকান্তোজ-শৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্। গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্। রৌক্সপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু॥
মূল মন্ত্র -: ওঁ শ্রীং শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ ।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র -: ওঁ নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিত্ত্বৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্মদর্চনৎ৷৷ এষ সচন্দনগন্ধপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীং শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
প্রনাম মন্ত্র -: ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্ব্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মি নমোহস্তুতে ।
দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজোর দিন সন্ধ্যায় চতুস্পদ (চৌমাথা), শ্মশান, নদীতীরে, পর্বতের নিম্নভাগে,বৃহৎ বৃক্ষের গড়ায়,গোশালায়, প্রাঙ্গণে, এবং সকল ঘরে দীপদানের বিধি আছে।
অলক্ষ্মী -: দেবী অলক্ষ্মী হলো অমঙ্গল ও অশুভের প্রতীক, দুর্ভাগ্যের দেবী বলে মনে করা হয়। দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজার সন্ধাবেলায় হিন্দু ধর্মের মহিলারা এই অলক্ষীর পূজা ও আচার পালন করে। শাস্ত্রমতে অলক্ষী হলো দেবী লক্ষ্মীর বড়ো বোন।সুমদ্র মন্থনের সময় দেবী অলক্ষ্মীর আবির্ভাব ঘটে।অলক্ষী যেখানে সেখানে সব সময় হিংসা, ঝগড়া, ঝামেলা, অহংকার, লেগে থাকে। তিনি নিস্ক্রিয়তার প্রতিমূর্তি অলসতা,লঘু মস্তিষ্ক এবং জড়তার উপর তার প্রভাব পরে।
পুরান মতে অলক্ষী দেখতে, গায়ের রং কালো, মাথায় বড় বড় ঝাঁঙরাচুল, দুটি হাত হাতে ঝাঁটা,চোখ দুটো বড় বড়, গায়ে লোহার গয়না। দেবী অলক্ষ্মীর বাহন গাধা।
অলক্ষ্মী পূজাবিধি -: বাড়ির বাইরে অলক্ষ্মী পূজা করা নিযম।গোময় দিয়ে পুত্তলিকা তৈরি করিয়া বামহস্তে কৃষ্ণপুস্প দ্বারা পূজোর নিয়ম।
অলক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র -: ওঁ অলক্ষ্মীং কৃষ্ণবর্ণাঞ্চ ক্রোধনাং কলহপ্রিয়াম্। কৃষ্ণবস্ত্রপরীধানাং লৌহাভরণভূষিতাম্।। ভগ্নাসনস্থাং দ্বিভূজাং শর্করাঘৃষ্টচন্দনাম্ ।। সম্মজ্জনীসব্যহস্তাং দক্ষহস্তস্থশূপকাম্।তৈলাভ্যঙ্গিতগাত্রাঞ্চ গদ্দোভারোহণাং ভজে।।
অলক্ষ্মী পূজার মন্ত্র -: ওঁ অলক্ষ্মৈঃ নমঃ।
প্রনাম মন্ত্র -: ওঁ অলক্ষীস্তং কুরূপাসি কুৎসিতস্থানবাসিনী। সুখরাত্রৌ ময়া দত্তাং গৃহূ পূজাঞ্চ শাশ্বতীম্ ।।দারিদ্র্য কলহ প্রিয়ে দেবী ত্বং ধননাশিনী।যাহি শত্রোগৃহে নিত্যং স্থিরা তত্র ভবিষ্যাসি।।যদি ত্বং মে মহাভাগে প্রীতা ভবসি সর্বদা ।পুত্রবন্ধুকলত্রেষু কদাচিন্নাগমিষ্যসি ।।গচ্ছ ত্বং মন্দিরং শত্রেগৃহীত্ব চাশুভং মম।মদাশ্রয়ং পরিত্যজ্য স্থিতা তত্র ভবিষ্যসি।।
এই মন্ত্র বলিয়া বাদ্য বাজিয়ে বাড়ি থেকে দূরে রাখার পর অগ্নি দিয়ে কুলা বাজাইয়া বাড়িতে আসিতে হয়।
এরপর হাত পা ধুয়ে যথানিয়মে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা করার প্রচলন রয়েছে।
দীপান্বিতা রাত্রে লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী পূজা উদযাপন করার মূল উদ্দেশ্য হলো অশুভ দূর করে শুভ শান্তিকে প্রতিষ্ঠা করা ।