পঞ্চকন্যা কে কে ?

পঞ্চকন্যা হলো – অহল্যা, দ্রৌপদী, কুন্তী, তারা, মন্দোদরী।

প্রতিদিন নিয়ম পূর্বক পঞ্চকন্যার নাম স্বরন করিলে মহাপাপ থেকে মুক্তি হয়।

অহল্যা – সত্যযুগে ব্রহ্মার মানসকন্যা ছিলো অহল্যা।অহল্যা এক জন হল্যহীনা নারী রামায়নে বর্নিত বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি নারী। গৌতম মুনি ছিলো অত্যন্ত সংযমী তাই ব্রক্ষা তাঁর কন্যা অহল্যাকে বহুদিনব্যাপী গৌতম মুনির কাছে রেখে গিয়েছিল। গৌতম মুনির কাছে থাকলে ও অহল্যাকে তিনি পবিত্র ও নিস্কলঙ্ক অবস্থায় রেখেছিল। এই জন্য ব্রহ্মা সন্তষ্ঠ হয়ে গৌতম মুনির সাথে অহল্যার বিবাহ দেয়। গৌতম মুনির অন্যতম শিষ্য ছিলো দেবরাজ ইন্দ্র। ইন্দ্র মনে মনে অহল্যাকে স্ত্রী রুপে পেতে চেয়েছিল। এক দিন গৌতম মুনি স্থান করার জন্য আশ্রম থেকে বেরিয়ে গেল সেই সময় ইন্দ্র গৌতম মুনির রুপ ধরে কামোন্মত হয়ে গুরু পত্নী অহল্যার কাছে এসে তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করে। গৌতম মুনি ফিরে এসে সমস্ত কিছু জানতে পেরেছিল। তখনই গৌতম মুনি ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয় বলে তোর সহস্রযোনি হবে। সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রের সারা দেহে সহস্র যোনি হয়ে যায়। পরে পিতৃগনের কৃপায় ইন্দ্র যৌনি মুক্ত হয়। অহল্যাকে অভিশাপ দেয় পাথর হয়ে আশ্রমের পাশে থাক। অহল্যার বহু অনুরোধের পর গৌতম মুনি বলে ত্রেতাযুগে রামচন্দ্রের পাদস্পশে শাপমুক্ত হবে, পুনরায় গৌতম মুনির সাথে অহল্যার মিলন হবে।

কুন্তী – কুন্তী ছিলো যাদব শাষক সুরসেনের কন্যা। ছোট বেলায় তার নাম ছিলো পৃথা। সুরসেনের কাকার ছেলে নাম কুন্তীভোজ তাঁর কোন সন্তান ছিল না। পৃথা কুন্তীভোজের কাছে বড় হয় তখন তার নাম হয় কুন্তী। একবার ঋষি দুর্বাসা কুন্তীভোজের গৃহে এসেছিল তখন কুন্তীর সেবা ধৈর্য এবং ভক্তি দেখে তিনি কিন্তীর প্রতি অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকে একটি মন্ত্র দিয়েছিল বলে তোমার পছন্দের যে কোন ও দেবতাকে এই মন্ত্র বলে আমন্ত্রণ করলে তিনি দেখা দেবে এবং সন্তান পাওয়ার আশির্বাদ দেবে। কুন্তী কৌতুহলে বশবতী হয়ে মন্ত্র বলে সূর্যদেবকে ডাকে সূর্যদেব তাকে দেখা দিয়ে সন্তান প্রসবের আশির্বাদ দেয়। যথাসময়ে তাঁর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্ৰহন করে। লোকলজ্জার ভয়ে কুন্তী পুত্র সন্তানকে একটি ঝুড়িতে রেখে গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরে কুন্তীর এই পুত্র কর্ন নামে বিখ্যাত হয়। পরে হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তীর বিবাহ হয়। পাণ্ডুর দুই জন স্ত্রী কুন্তী এবং মাদ্রী। বিয়ের পর কুন্তীর তিন জন পুত্রের জন্ম হয়েছিল যুধিষ্ঠি, ভীম, আর অর্জুন,মাদ্রীর গর্ভে নকুল ও সহদেবের জন্ম হয়। অকালে পাণ্ডুর মৃত্যু হলে তার দ্বিতীয় পত্নী মাদ্রী সহমরনে যায়। কুন্তী পঞ্চপুত্রের জননী হয়ে থাকে।

দ্রৌপদী – পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা হল দ্রৌপদী। রাজা দ্রুপদ গঙ্গা যমুনার তীরে যাজ ও উপযাজ নামে দুই ব্রাক্ষনের সাহায্যে পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞ করে। সেই যজ্ঞবেদী থেকে শ্যামবনা সুন্দরী কন্যা দ্রৌপদীর জন্ম। অর্জুন এক লক্ষ্যভেদী পরীক্ষার জয় লাভ করে দ্রৌপদীকে পায়। অর্জুনের মায়ের ইচ্ছাতেই পাণ্ডবরা পাঁচ ভাই দ্রৌপদীকে বিবাহ করে। দ্রৌপদীর পাঁচজন পুত্র হয় তাদের নাম প্রতিবিন্ধ‌্য,সুতসোম,শ্রুতকমা, শতানীক , ও শ্রুতসোম। দ্রৌপদীর একটি তামার পাত্র ছিল। পাত্রটির বিশেষ গুন ছিল – ঐ পাত্রে রান্না করা খাবার যতক্ষন পর্যন্ত দ্রৌপদী না খাবে ততক্ষন পাত্রটি খাবারে পরিপূর্ণ থাকবে। দ্রৌপদীকে নিয়ে মতভেদ আছে । ব্রহ্মবৈবত পুরানে দ্রৌপদীর কাহিনী আলাদা। শ্রী রামচন্দ্র বনবাসে যাবার সময় অগ্নিদেবতার কাছে সীতাকে রেখে যায়। রামচন্দ্র জানতো সীতাকে হরন করবে। রামচন্দ্রের কাছে থাকতো ছায়া সীতা ঐ ছায়াসীতাই দ্রৌপদী।

মন্দোদরী – ময়দানবের কন্যা মন্দোদরী মায়ের নাম হেমানাম্মী অপসরা। মহারাজ রাবন মন্দোদরীকে বিয়ে করে। ত্রিভুবন বিজয়ী বীর মেঘনাদ মন্দোদরীর পুত্র।

তারা – বানররাজ সুষেনের কন্যা কিস্কিন্ধ্যার রাজা বালীর সাথে তারার বিয়ে হয়। তাঁর পুত্রের নাম অঙ্গদ। রামচন্দ্র লুকিয়ে বালিকে হত্যা করেছিল। সেই জন্য তারা রামচন্দ্রকে অভিশাপ দেয়। তারাকে নিয়ে মতভেদ আছে। অপর মতে রাবন ময়দানবের কন্যা মন্দোদরীকে বিয়ে করে লঙ্কার ফিরবে সেই সময় বালীর মন্দোদরীকে হরন করতে উদ্যত হয়। তখন রাবন এবং বালী উভয় দিক থেকে মন্দোদরীকে ধরে টানাটানি করতে থাকলে মন্দোদরী দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। মন্দোদরীর বাবা ময়দানব এসে শিবের প্রসাদে কন্যার উভয় শরীরে প্রানসঞ্চার করে। একটি শরীর বালী গ্ৰহন করে – তার নাম তারা, অপর শরীর মন্দোদরী রূপে রাবন গ্ৰহন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top