ভগবান শিব সনাতন ধর্মের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রধান দেবতা। তিনি দেবাদিদেব মহাদেব, নীলকন্ঠ,ত্রিনেত্রধারী, শংকর, মৃত্যুঞ্জয়, একাধিক নামে পরিচিত। ভগবান শিবের বাণীগুলো তাহার ভক্তদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথনির্দেশনা দেয় এবং আত্মশক্তির বিকাশের সহায়ক হয়। ভগবান শিবের অতি মুল্যবান ১০টি বাণী যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব প্রাসঙ্গিক এবং প্রেরণামূলক।
(১) আত্মাশক্তির ওপর বিশ্বাস রাখা -: ভগবান শিবের অন্যতম প্রধান বাণী হলো আত্মাশক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখা। এই বাণীর মর্ম হলো, জীবনযুদ্ধে সাফল্যের জন্য নিজের উপর বিশ্বাস থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ দরকার। আমরা যখন নিজেদের শক্তি ও ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখি ,তখন যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি
হ ওয়া সহজ হয়ে য়ায। এটি আত্মবিশ্বাস ও নিজেকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।
(২) সত্যের পথে চলা -: ভগবান শিব সর্বদা সত্যের পূজারী এবং সবাইকে সত্যের পথে চলার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সত্যই আমাদের সঠিক পফ দেখতে পারে। সত্যের প্রতি দূঢ় বিশ্বাস আমাদের চরিত্রকে আরো বেশি শক্তিশালী করে এবং পাপ কর্ম থেকে মুক্তি দেয়।
(৩) আধ্যাত্মিকতা ও ধ্যান করা-: ভগবান শিব ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের উপদেশ দেন। তিনি নিজে ধ্যানের মাধ্যমে আত্মশক্তির সংযোগে থাকতেন। তিনি বলেন আধ্যাত্মিকতা আমাদের মনের গভীরতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। যখন আমরা আধ্যাত্মিকতার মনোযোগ দিই তখন আমরা জীবনের গভীরতার অর্থ উপলব্ধি করতে পারি। আধ্যাত্মিকতা জীবনের চরম শান্তি ও সুখ ও সমৃদ্ধি লাভের পথ।
(৪) মৃত্যুকে ভয় না করা -: ভগবান শিবের হলো এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বাণী মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে গ্ৰহন করা। তিনি বলেন জন্ম ও মৃত্যু হলো জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই কর্ম অর্থাৎ কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের উচিৎ নিজ নিজ কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং কাজকে দায়িত্বের সাথে সম্পূর্ন করা। তবেই জীবন সফল ও সার্থক হবে।
(৫) বিনয় ও সহমর্মিতা পালন করা -: ভগবান শিব সমস্ত জীবের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি নিজে বিনয়ী, তিনি বলেন বিনয় এবং সহানুভূতি যা সমাজে শান্তি এবং সমন্বয় বজায় রাখতে সাহায্য করে। সমস্ত জীবের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। প্রত্যেক জীবের সৃষ্টির মধ্যে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।তাই কাউকে ছোট বা বড় করে দেখতে নেই। সমস্ত জীবের প্রতি সমান গুরুত্ব প্রদান করা দরকার।
(৬) জাতি ও ধর্ম বিভেদ না করা -: ভগবান শিবের বাণী হলো মানবতাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া। তিনি বলেন,জাতি ও ধর্ম বিভেদ ভুলে , আমরা সবাই মানুষ কেবল মাত্র মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। মানুষ মানুষের দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে। মানবতাকে পালন করা হলো প্রকৃত ধর্ম পালন করা।
(৭) নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা -: ভগবান শিবের অন্যতম বাণী হলো নিজের দায়িত্বকে পালন করা,তা যত কঠিনই হোক। তিনি বলেন, নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা হলো মানুষের প্রকৃত ধর্ম। নিষ্ঠুর সাথে পালন করলে আমাদের চরিত্রে উন্নতি হয় এবং জীবনের সঠিক লক্ষে যাওয়া যায়।
(৮) অহংকার ত্যাগ করা -: ভগবান শিবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী হলো অহংকার ত্যাগ করা। অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয় এবং বিনাশের পথে নিয়ে যাবে। অহংকার ত্যাগ করে বিনয়ী হওয়াই প্রকৃত মহত্ত্ব।
(৯) আত্মনিয়ন্ত্রণ করা -: ভগবান শিব কঠিন পরিস্থিতিতে ও ধৈর্য্য হারাননি। তিনি ধৈর্য্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দেবতা। তিনি বলেন, জীবনে আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা আসল শক্তি ।ক্রোধ ,লোভ, অহংকার, এই গুনগুলো নিয়ন্ত্রন করলে আমাদের ব্যক্তিত্বের উন্নতি হয়।
(১০) ভয়কে জয় করা -: ভগবান শিব একজন অভয় দেবতা তিনি ভয়কে পরাস্ত করার জন্য বলেন জীবনে আমরা যখন কোন ভয়ের সম্মুখীন হই , তখন সেই ভয়কে পরাজিত করার শক্তি হলো আমাদের মন এবং আত্মার খুঁজে পেতে হবে,ভয়কে পরাস্ত করতে পারলে তবেই সাফল্য লাভ হবে।
ভগবান শিবের এই ১০টি বাণী আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে এবং প্রকৃত সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আত্মশান্তি অর্জনের পথ দেখায়।